ক্লাসের অন্য ছাত্রছাত্রীরা তখন বছর শেষের উন্মাদনায় ডুবে আছে। নতুন বছরকে আপন করে নেবার জন্য সকলের মনের মধ্যেই তখন অভাবনীয় উচ্ছাস। ব্যতিক্রম কেবল রোহণ। ক্লাসের সকলেই রোহণকে বিদ্যার-ট্যাংকি বলে ক্ষেপায়। আসলে সেই ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি রোহণের ঝোঁক চোখে পড়ার মতন। বই কিম্বা ল্যাপটপে মুখ গুঁজে পড়ার খুঁটিনাটি তথ্য সমুহ নিয়ে চর্চা করা তার নেশা। আজকেও ব্যতিক্রম হয় নি, ক্লাসের সকলে যখন বছর শেষের পার্টি করতে উৎসাহিত সেখানে রোহণ ল্যাপটপে নিজের পড়ালেখা সংক্রান্ত কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত।
"এই রোহণ,আজকের দিনেও তুই একা থাকবি? চল না আমাদের সঙ্গে।" উৎসাহের সঙ্গে কথাটা বললো অবিনাশ। রোহণের এক ক্লাসমেট। কিন্তু মুচকি হেসে রোহণের উত্তর," আসবো। একটু পরে, কাজটা সেরে নেই। তোরা এনজয় কর।"
অবিনাশ আর কথা বাড়ায় নি,সে জানে রোহনের কথার নড়চড় হবে না। রুমের দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে অবিনাশ বেরিয়ে যায়। এদিকে রোহণ আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজের কাজ নিয়ে।
***********
মুখার্জি অ্যান্ড সন্স কোম্পানির মালিক উদাস ভাবে চেয়ে আছেন জানালার বাইরে। ওনার কোম্পানির অবস্থা ভালো নয়। যেকোনো সময় বড় কিছু আর্থিক সংকটের সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে। নিজের একজন বিশ্বস্ত কর্মীকে উনি বলেছেন যতটা সম্ভব হয় কোম্পানির সকলকেই যেন এই মাসের নায্য বেতন প্রদান করা হয়,তারপর কোম্পানি থাকবে কিনা সেটা উনি নিজেও জানেন না। অনেক পুরাতন কথা মনে পড়ছে আজ মিস্টার মুখার্জির। তিলে তিলে কতো পরিশ্রমের চেষ্টায় কোম্পানি টা দাঁড় করিয়ে ছিলেন। কিন্তু ওনার শারীরিক অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে ওনার ছোট ভাই কোম্পানি কে পথে বসিয়েছে। দেনার দায়ে আজ ডুবে আছেন মুখার্জি বাবু। এইসেই ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ ওনার কেবিনে ঢোকে রোহণ।
"মুখার্জি স্যার আপনি আমার উপর একবার বিশ্বাস করে দেখুন। আমি ভরসা দিচ্ছি আপনার কোম্পানী দেউলিয়া হবে না।" আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে কথাটা বললো রোহণ। বৃদ্ধ মুখার্জি বাবু স্মিত হেসে বললেন,"আর যে কিছু করার নেই রোহণ। সব তো শেষ হয়ে যাবার পথে।"
"শেষ হয়ে যাবার পথে,শেষ হয় নি তো এখনও। আপনি একবার আমার প্রস্তাব টা নিয়ে ভেবে দেখুন প্লিজ স্যার। আমি আশাবাদী আমাদের কোম্পানি এই প্রতিকূল অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসবে।"
মুখার্জি বাবু দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বললেন," তুমি সত্যিই পারবে রোহণ এই অবস্থার পরিবর্তন করতে?"
অশ্রু সজল কণ্ঠে রোহণের উত্তর,"হ্যাঁ স্যার। নিশ্চই..."
********
মুখার্জি অ্যান্ড সন্সের গ্লোসাইন টা জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। কনফারেন্স হলে নিজের একটা কোর টীম নিয়ে প্রেজেন্টেশন রেডি করেছে রোহণ। আজ ক্লাইন্টের সঙ্গে মিটিং আছে তার। নিজের কেবিনে বসে মুখার্জি বাবু মনে মনে ভাবছেন রোহণ শুধু কর্মী নয়,তার চেয়ে কিছু বেশি। নিজের বুদ্ধিমত্তায় সেবার কোম্পানিকে দেউলিয়া হবার থেকে রক্ষা করেছিল রোহণ। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকায় নি ওনার কোম্পানি,এগিয়ে গেছে সাফল্যের শিখরে আর সবটাই হয়েছে রোহণের কর্মনিষ্ঠায়। সেদিন রোহণ একা ছিলো আর আজ রোহণের আন্ডারে রয়েছেন বেশ কিছু নবীন সহকর্মী। সকলের যৌথ উদ্যোগে এবং যৌথ ভাবে কাজ করার কারণেই মুখার্জি অ্যান্ড সন্স কোম্পানি আজ আবার হারিয়ে যাওয়া গরিমা পুনরুদ্ধার করতে পড়েছে। রোহণ একজন সুযোগ্য লিডার হয়ে এখন কোম্পানির সকল কাজ সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করে।
_______*________