আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা (পর্বঃ ২০.২)

এসব দেখে ওর আরো মিহির এর কথা মনে পরছে। ওর চোখ ছলছল করছে। এই লোকটার জায়গায় মিহির থাকলে কি খুব বেশি ক্ষতি হতো‌।
Estimated read time: 6 min
কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা (পর্বঃ ২০.২)

কৃষ্ণবেণী
নন্দিনী নীলা

পর্ব ২০(২)
জায়ান দের ডাইনিং রুমে বসে আছে উর্মিকে দেখতে আসা পাত্রপক্ষ। পাত্র ঠিক করেছে উর্মির বাবা সাদিকুর রহমান। উর্মি যন্ত্রের মত রেডি হয়ে পাত্রপক্ষের সামনে বসে আছে। ওর চোখ দুটো ছল ছল করছে। ও জানে মিহির ওকে ভালোবাসে না আর না কোনদিন ভালোবাসবে।তাই শুধু শুধু বাবা কথা অমান্য করার কোন মানেই হয় না। জায়ান ভাইয়া ও তাকে বিয়েতে সম্মতি দিতে বলেছে। ভাইয়া কে আর তার পাশে পাওয়ার আশা করা বৃথা তাকে। আমি কষ্ট দিয়েছি। সবটা না জানিয়ে। পাত্র উর্মির সাথে একা কথা বলার জন্য বলল।

সাদিকুর রহমান সম্মতি দিয়ে উর্মি কে বলল," আরিফ কে ভেতর নিয়ে যাও উর্মি।"

উর্মি জড়োসড়ো হয়ে উঠে দাঁড়ালো। উষসী হেসে উর্মির কানে বলল," আরিফ কে ছাদে নিয়ে যাও।"

উর্মি প্রতি উত্তর না করে হাঁটা ধরলো। কথা না বললেও উষসীর কথা শুনে ছাদেই নিয়ে এসেছে।

আরিফ ছাদের রেলিং এ হেলান দিয়ে উর্মির দিকে তাকিয়ে আছে। উর্মি নীল রঙের শাড়ি পরে ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে। শাড়ির আঁচল আঙুলে পেছাচ্ছে তো খুলছে। আরিফ তাকিয়ে উর্মির দিকে। ও উর্মির অস্বস্তি টের পাচ্ছে। কিন্তু মুখে কিছু বলছে না। নিশ্চুপ চেয়ে আছে।

এদিকে উর্মি জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সামনের মানুষটা কিছু বলছে না দেখে ওর অস্বস্তি আরো বেড়ে যাচ্ছে। আড়চোখে বার কয়েক লোকটার দিকে তাকিয়েছে লোকটা অদ্ভুত ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

এসব দেখে ওর আরো মিহির এর কথা মনে পরছে। ওর চোখ ছলছল করছে। এই লোকটার জায়গায় মিহির থাকলে কি খুব বেশি ক্ষতি হতো‌।

অন্য একটা ছেলের সামনে এভাবে সেজে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে ওকে ভাবতেই চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।

না চাইতেও উর্মির চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে একদম ছাদের ফ্লোরে গিয়ে পরলো‌।

আরিফের নজরের চোখের জল না এলেও ও বুঝতে পারছে সামনের মেয়েটার কোন কারণে বিশেষ মন খারাপ।

দুজনেই চুপচাপ র‌ইলো অনেকটা সময়। এবার আরিফ নিজেই কথা বলল," তোমার কি কোন কারণে মুড অফ?"

উর্মি চমকে মাথা উঁচু করে তাকালো আরিফের দিকে আর মাথা নেড়ে না বলল।

আরিফ এবার ভালো করে উর্মির বিষন্ন মলিন মুখটার দিকে তাকিয়ে মনে মনে হাসলো। ও কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরেছে বোধহয়।

" সিউর?"

উর্মি বলল," ইয়েস।"

" তুমি মুখ দিয়ে মিথ্যে বাক্য বললেও চোখ কিন্তু তোমার বিষন্নতা প্রকাশ করে দিচ্ছে। আর এতেই তোমাকে আমার কাছে মিথ্যাবাদী করে দিলো।"

উর্মি থতমত খেয়ে অবাক চোখে তাকায় আরিফের দিকে।

উর্মি অবাক গলায় বলল," কি সব বলছেন?"

" বয়ফ্রেন্ড জানে আজকে যে তোমায় পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে!"

উর্মি ঢোক গিলে বলল," আমার কোন বয়ফ্রেন্ড নাই। আপনি ভুল বুঝছেন।"

" সব কিছু বলতে পারো আমি মাইন্ড করব না। প্রথম দেখা‌ই আমার তোমাকে পছন্দ হয়ে গেছে। তাই আমি নিচে গিয়ে বিয়ের জন্য সম্মতি দেব। আমার সম্মতি পেলে এই বিয়ে তোমার বাবা ভাঙতে দেবে না কোন ভাবেই‌‌। কারণ এই বিয়ের পেছনে তার স্বার্থ আছে। তাই আমি সম্মতি দেওয়ায় আগে আমাকে সব বন্ধু মনে করে জানাও‌।‌তাহলে না হয় পাত্রী কে বন্ধু ভেবে একটা উপকার করে দেব।"

উর্মি কি বলবে ভেবে সব পাচ্ছে না। বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে‌। লোকটা কি পাগল নাকি সেটাই ভাবছে এমন অদ্ভুত দ্বারা মানুষ ও কখনো দেখে নি।

" আপনি ভুল ভাবছেন আমার সত্যি কোন বয়ফ্রেন্ড নাই।" মাথা নিচু করে বলল উর্মি।

আরিফ বলল," তাহলে মুখটা এমন শুকনো করে রেখেছো কেন? আমাকে কি পছন্দ হয়নি? কার জন্য এই মন খারাপ?"

" আমি একজন কে পছন্দ করতাম। কিন্তু সে আমাকে সহ্য করতে পারে না।"

" এক তরফা ভালোবাসা?"

" হুম সেইরকম টাই ভাবতে পারেন!"

" তাহলে তো ভালোই। ওই একতরফা ভালোবাসার জন্য আমি তোমাকে ছাড়তে পারব না। এই বিয়েটা তাহলে হচ্ছে।"

" আমি ওকে অনেক ভালোবাসি‌। ও আমাকে ভালো না বাসলেও আমি সারাজীবন একাই ওকে ভালোবেসে যাব।"

" এতো দিন তোমাকে ভালোবাসার কেউ ছিল না তাই তুমি ঐ গাধাকে একতরফা ভালোবেসে গেছো। কিন্তু এখন আর সেটা হবে না। কারণ তোমাকে ভালোবাসার কেউ চলে এসেছে তার ভালোবাসার কাছে তোমার একতরফা ভালোবাসা ফিকে হয়ে যাবে।"

" আমি জানি ও আমাকে কখনোই ভালোবাসবে না। কিন্তু আপনাকে ও আমি ভালোবাসতে পারব না কখনো। তাই এই বিয়েটা আর আমার পেছনে সময় নষ্ট না করাই ভালো হবে। কিন্তু আমি এই বিয়ে ভাঙার জন্য বাসায় কিছুই বলতে পারব না কারণ সেই মুখ আমার নেই। তাই আপনি এই বিয়ে ভেঙে অন্য কাউকে নিজের জন্য চুজ করেন।"

" চয়েজ তো করেই ফেলেছি। এটাই ফাইনাল। তোমার কথা শেষ হয়ে থাকলে চলো এবার নিচে যাই। না হলে সবাই ভাববেই প্রথম সাক্ষাতেই এতো প্রেম করছে এদের আজকেই বিয়ে পড়িয়ে দেই।"

উর্মি চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো আরিফ বাঁকা চোখে তাকিয়ে চোখ টিপে নিচে চলে গেল।


_____________________


তৃষ্ণা পড়ার টেবিলে বসে আছে। ওর সামনে বসে আছে রুশা।

রুশা এক সপ্তাহ ধরে আসছে তৃষ্ণা কে পড়াতে।

তৃষ্ণা হামি দিচ্ছে বারবার। বিকেল টাইম তবু ঘুমে ও তাকিয়ে থাকতে পারছে না। রুশার একটা কল আসে ও উঠে তৃষ্ণাদের বেলকনিতে গিয়ে ফোন রিসিভ করে কয়টা কথা বলে আসে।

এসে দেখে তৃষ্ণা টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে আছে। ও কয়েকবার ডাকে তবুও তৃষ্ণার সাড়া আসে না উপায় না পেয়ে ব্যাগ হাতে বেরিয়ে আসে।

গেইটের বাইরে জায়ান এর সাথে দেখা হয়। জায়ান টাইম দেখে বলে," এতো আগেই চলে যাচ্ছেন কেন?"

রুশা তৃষ্ণার ঘুমানোর কথা বলে। জায়ান রুশাকে বিদায় দিয়ে রুমে এসে দেখে তৃষ্ণা টেবিলে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে। এমন করলে এই মেয়েকে লেখাপড়া শেখাবো কি করে। প্রতিদিন কোন না কোন বাহানা দিয়ে পড়ার গাফিলতি করবেই। জায়ান তৃষ্ণার হাত ধরে এক টানে চেয়ারে থেকে দাড় করিয়ে দেয়। ঘুমের মাঝে এমন টান পেয়ে তৃষ্ণা ধরফরিয়ে উঠে। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। কাঁচা ঘুম তাই চোখ ঘোলাটে হয়ে গেছে ও হেলে জায়ানের বুকের উপর পরে। জায়ান তৃষ্ণার দুই কাঁধ ধরে নিজের থেকে সরিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে," পড়ার সময় কিসের ঘুম হ্যা? রাত ভর ঘুমিয়ে ও এই সময় তুমি ম্যাডাম কে বসিয়ে ঘুমিয়ে যাও।"

তৃষ্ণা কাঁচুমাচু মুখ করে বলে," খুব মাথা ব্যথা করছিল। আমি তাকাতে পারছি না। খুব ঘুম পাচ্ছে।"

" রাতে কি আমি তোমায় ঘুমাতে দেই না? যে তোমার পড়ার সময় ঘুম ধরে?"

" আপনি যেভাবে জাপ্টে ধরেন আমার ঘুম হয়না। দম বন্ধ হয়ে আসে।"

" যেখানে আমার অনেক কিছু করার কথা ছিল সেখানে শুধু আমি জড়িয়ে ধরি এতেই তোমার ঘুম হয়না। আর কয়দিন পর যখন আরো অনেক কিছু করে জাগিয়ে রাখব তখন তুমি কি করবে?"

" আমি আপনার সাথে পরে কথা বলি। আমি একটু ঘুমাই আসি।"

বলেই তৃষ্ণা ঠাস করে বিছানায় শুয়ে পরলো।

জায়ান হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছে তৃষ্ণার দিকে।

জায়ান ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। উর্মি কে পাত্র পক্ষ দেখে যাওয়ার পর উর্মি আর দরজা খোলে নি। জায়ান দরজা ধাক্কা দেয় নো রেসপন্স। উর্মি বলে ডাকতেই দরজা খোলে।

" ভাইয়া কিছু বলবে?"

" তোমাকে এই বিয়েটা করতে হবে। কষ্ট লাগলেও নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করো। আরিফ খুব ভালো ছেলে। আমি নিজে পছন্দ করেছি ওকে তোমার জন্য। ও আমার বোনের জন্য পারফেক্ট হবে। আশা করছি এই বিয়ের জন্য তুমি মন খারাপ করবে না।"

" আমি মিহির কে সত্যি ভালোবাসি অনেক ভাইয়া। চাইলেই কি সেটা ভুলতে পারব?"

" চাইলে সব পারা যায়। মিহির কে ও ভোলা খুব

অসম্ভব হবে না।"

জায়ান উর্মির মাথা হাত দিয়ে বলে, " আমি জানি তুমি আমার কথা রাখবে।"

উর্মি মুখ ফিরিয়ে নিলো। জায়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেরিয়ে এলো রুম থেকে।

জোভান ভাইয়ের পিছনে এসে বলল," ভাই তুমি কেন সবাইকে তার ভালোবাসা ছাড়তে বলো। তুমি নিজের বেলায় তো এটা করো নি। সবাইকে বাদ দিয়ে তৃষ্ণা ভাবিকে একা বিয়ে করে নিয়ে এলে। কিন্তু বাকি সবার বেলায় কেন তার ভালোবাসার

বলিদান করো?"

জায়ান আগুন চক্ষু মেলে তাকালো জোভানের দিকে।

জোভান ভয় পেলেও সাহস নিয়ে বলল," আমি জানি মিহির কে তুমি কিছু বলেছ। যার জন্য ও কখনো উর্মির ভালোবাসা গ্রহণ করেনি। বোনের সামনে ভালো হতে তুমি মিহির কে মেনে নেওয়ার নাটক করেছ। আর বুঝিয়েছ মিহির উর্মি কে ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সব কিছুর পেছনে তোমার হাত আছে কেউ বুঝতে পারেনি।"

জায়ান জোভানের দিকে ফিরে ঠাস করে জোভানের গালে চর মেরে বলল," নিজের ভালোবাসা হারাতে না চাইলে উর্মিকে এসব জানানোর ট্রাই করিস না। আমি যা করেছি আমার বোনের ভালোর জন্য করেছি।"

" ভালোবাসা হারানোর কষ্ট তুমি বুঝবে না কারণ তুমি তাকে হারাও নি। যদি হারাতে...

জায়ান জোভানের গলা টিপে ধরে বলল," আমার ভালোবাসা নিয়ে কথা বললে তুই আমার ভাই সেটা ভুলে যাব।"

জোভান ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে। জায়ান হাত ছাড়িয়ে চলে গেল।

জেসমিন বেগম দূর থেকে সবটা লক্ষ্য করল।




#চলবে...?

إرسال تعليق

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.