আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা পর্বঃ ১১ (প্রথম অংশ)

কৃষ্ণবেণী - পর্ব ১১ (প্রথম অংশ) -নন্দিনী নীলা,উপন্যাস,কৃষ্ণবেণী,নন্দিনী নীলা,ধারাবাহিক,
Estimated read time: 6 min

কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা পর্বঃ ১১ (প্রথম অংশ)


কানে কানে খবর এলো সুজন বিয়ে করেছে। শোনা মাত্রই বকুল ছুটে গিয়েছে নতুন বউ দেখতে। নতুন বউ উঠোন ঝাড়ু দিচ্ছে। পরনের লাল শাড়ি। মাথায় ঘোমটা টেনে নিচু হয়ে ঝাড়ু দিচ্ছে। বকুল পরিষ্কার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে চেয়ে রইল নতুন বধূর দিকে।

বকুল নিজের ওড়নাটা গলায় পেচিয়ে আশেপাশে নজর বুলিয়ে সুজন'কে খুঁজল। তখনি সুজনের মা বেরিয়ে এলো রুম থেকে বকুলকে দেখে তিনি বললেন," বকুল নাকি রে?"

বকুল দাঁত কেলিয়ে এগিয়ে আসলো সুজনের মায়ের দিকে।

" চাচি, চুপি চুপি সুজন ভাইরে বিয়া করাইয়া ফেললা। আমাগো দাওয়াত ও দিলা না।"

"গরীব হ‌ইলেও একমাত্র পোলারে অনুষ্ঠান ক‌ইরা বিয়া দেবার চাইছিলাম। কিন্তু পোলার তর সইলো না। দেখবার যাইয়া কয় বিয়া না ক‌ইরা আইবো না। কি করমু ওর জেদের লিগা হার মানলাম।"

" ভালোই হ‌ইছে ভাবি ত মেলা সুন্দর।"

" হ তোর বোইনের উপর রাগ ক‌ইরা এতো তাড়াহুড়ো করছে। আমার তো চুল ওয়ালা মাইয়া পছন্দ কিন্তু এই মাইয়ার মাথায় চুল নাই বেশি। তোগো দুইবোনের তো হাঁটু সমান চুল।"

নতুন ব‌উ ঝাড়ু রেখে এগিয়ে আসলো। সুজনের মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কথা বন্ধ করে অন্য দিকে চলে গেল।



বকুল সুজনের ব‌উ মালতি কে বলল,"ভাবী ভালো আছো? আমি তোমার পাড়া প্রতিবেশী ননদ।"

মালতি বকুল কে নিয়ে নিজের রুমে আসলো। এই বাড়ি এসে মালতির কিচ্ছু ভালো লাগে না। এই বাড়িটা একলা এক জায়গায়। তার উপর বাড়িতে শুধু এক শাশুড়ি আর স্বামী ছাড়া কেউ নাই। স্বামী তার একাই‌‌। ভাই বোন কিছু নাই। আর শশুর মারা গেছেন অনেক আগেই।

মা ছেলের সংসার। আর মালতি ভরা পরিবারের ছিল এজন্য একলা‌ লাগে ওর। তাই বকুল'রে পেয়ে ধরে রুমে নিয়ে আসলো গল্প করার জন্য।

বকুল রুমে এসে কিছুক্ষণ গল্প করল মালতির সাথে।

মালতি বকুলের চুল ধরে বলল,,,"কি সুন্দর চুল তোমার। কত লম্বা।"

বকুল গর্ব করে বলল,,"আমার বুবুর চুল আরো বেশি লম্বা।"

"তোমার বুবু আছে?"

"হ্যাঁ,আমার বুবুর শহরে বিয়া হইছে। আমার বুবু যেমন দেখতে পরীর নাগাল। তেমনি লম্বা চুল। আমি তো কালি।"

"তোমাদের দুই বোনেরই লম্বা চুল তাই না।"

"হ।"

"তোমার মায়ের মাথায় বুঝি লম্বা চুল?"

"হ, আমার মায়ের মাথায় অনেক লম্বা চুল। আমরা দুই বোন মায়ের মতো চুল পাইছি। ভাবি তোমার চুল দেহি!"

মালতি নিজের মাথার চুল দেখালো মালতির মাথার চুল কোমরের উপর পর্যন্ত। কোঁকড়ানো চুল। কোঁকড়ানো চুল বকুলের ভালো লাগেনা ওর চাচাতো বোনের কাঁধ পর্যন্ত কোঁকড়ানো চুল লম্বা হয় না। কেমন যেন সাপের মত কিলমিল করে যেন। কিন্তু মালতি ভাবীর চুল দেখে ওর পছন্দ হলো কোকড়ানো কিন্তু কি সুন্দর কোমর পর্যন্ত লম্বা ঘন।

"ভাবি তোমার চুল তো অনেক সুন্দর। কোঁকড়ানো চুল লম্বা হয় আমি জানতামই না। তোমার এত লম্বা হলো কি করে?"

বকুল অদ্ভুত প্রশ্ন করতে লাগল। মালতি কিছু বলতে যাবে তখনই সুজন এসে রুমে ঢুকল। সুজনকে দেখে বকুল সুজনের কাছে চলে গেল। বিয়ের দাওয়াত দিল না সেইসব বলতে লাগল।

মালতি স্বামীকে দেখে ঘোমটা টেনে জড়োসড় হয়ে বসে রইল।

____________________



উর্মি মিহিরের ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মিহিরের মায়ের অপারেশন হয়েছে। সেদিন মিহির কে হসপিটালে ভর্তি করিয়ে জায়ান আর উর্মি গিয়েছিল সেখানে অপারেশনের সমস্ত টাকা দিতে। হসপিটালে দুই একবার দেখা করতে এগিয়েছিল উর্মি কিন্তু মিহির ওর সাথে কথা বলে নি। ভাইয়া যেখানে রাজি ওর সাথে মিহির কে বিয়ে দেবে। সেখানে মিহিরকে কিভাবে বানাবে সেটাই বুঝতে পারছ না উর্মি। ভালোবাসার মানুষকে পাবার একটা চেষ্টা ও না করে কিভাবে থামবে?

অশান্ত মন নিয়ে ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এক সপ্তাহ পর মিহির কে আজ ভার্সিটিতে আসতে দেখেছে। আর দেখা মাত্রই একবার সরাসরি কথাটা বলা না পর্যন্ত শান্তি পাবে না ও।

অসুস্থ শরীর নিয়ে মিহির কে বেরিয়ে আসতে দেখেই উর্মি সোজা হয়ে দাঁড়ায়। ওকে ক্রস করতে যাবে মিহির তখনই সামনে গিয়ে পথ আগলে দাঁড়ায় উর্মি।

মিহির উর্মির দিকে তাকায় না। অন্যদিকে তাকিয়ে সরে যেতে চায়। কিন্তু বারবার‌ই উর্মি ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ও বিরক্তিকর গলায় বলে,"প্রবলেম কি? মেরে হসপিটালে ভর্তি করেও শান্তি হয়নি? আবার এসেছ! এবার কি জান নিতে চাও?"

উর্মি ফট করে মিহিরের ডান হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিল। মিহির চমকাল, ভরকাল।‌হাত ছাড়াতে যাবে উর্মি বলে উঠল,"আই এম সরি। আমাকে যা খুশি শাস্তি দাও মিহির। আমি সত্যি চাইনি সেদিন তুমি মার খাও‌। সবকিছু এক্সিডেন্টই হয়ে গেছে। আমি তোমার কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চাচ্ছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও।"

"লজ্জা শরম নাই? ক্যাম্পাসের মাঝে একটা ছেলের হাত ধরে আছ!"

হতচকিয়ে উর্মি হাত ছেড়ে দিল। আর অনুরোধ গলায় বলল,,"আমি সত্যি তোমার ক্ষতি চাই না। আমি যে তোমাকে ভালোবাসি। তুমি জানো মুখে না বললেও আমার কাজ কর্মে কি তুমি একটুও বুঝতে পারনি। যে মানুষকে ভালোবাসি সে তো একটু হলেও অনুভব করতে পারে। যাকে ভালোবাসি সে আমার চোখের সামনে আমারই ভাইয়ের হাতে মার খাবে। সেটা আমি কিভাবে চাইতে পারি?"

মিহির বলল,"তোমার মত একটা মেয়েকে আমি ভালোবাসবো কিভাবে ভাবতে পারলে? তোমাকে আমি জাস্ট বন্ধু ভাবতাম এর বেশি কিছুই না। আজকের পর থেকে সেই ভাবনাটাও বাদ দিয়ে দিলাম। আমার মায়ের অপারেশন টাকা দিয়ে আমাকে সাহায্য করেছ তার জন্য তোমার কাছে চির কৃতজ্ঞ।খুব শীঘ্রই সেই টাকা ফেরত দিয়ে দিব।"

বলে মিহির উর্মিকে ক্রস করে চলে গেল। উর্মি ছলছল চক্ষে তাকিয়ে রইল।

____________________



তৃষ্ণার সে রাতের পর থেকে এই বাসাতে থাকা ওর জন্য আরো ভয়ানক হয়ে গেছে। একা থাকতে ভয় ভয়। কখন আয়ান আবার হামলে পরে। জায়ান কে সবকিছু জানিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও জানাতে পারে না। সত্যিই তো জায়ান আয়ানের আপন ভাই তাও আবার জমজ ভাই। সে আমার সাথে কতটুকু সময় বা কাটিয়েছে। যদি বিশ্বাস না করে। উল্টো আমাকে অবিশ্বাস করে। প্রমাণ ছাড়া বলাটা যুক্তিসঙ্গত হবে না। এজন্য প্রমাণ দরকার। এজন্য তৃষ্ণা নিজেই নিজেকে হেফাজতে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।

এর মাঝে সেই জমজ দুই বাচ্চার সন্ধান পেয়েছে।

তারা হচ্ছে তৃষ্ণার শ্বশুরের বোনের মেয়ের দুই ছেলে মেয়ে। বেড়াতে এসেছিল চলে গেছে। তৃষ্ণা এখন বেশিরভাগ সময় লিয়ার আশেপাশে ঘুরঘুর করে‌। লিয়ার সাথে রান্না ঘরেও দাঁড়ায় থাকে।

একা থাকলেই মনে হয় শয়তান টা চলে আসবে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার সেদিনের পর আয়ান বা জায়ান কাউকে বাসায় দেখি নি। কাউকে জিজ্ঞেস করার ও সুযোগ পায় নি।

তৃষ্ণার জা উষসী তার সাথে তৃষ্ণার কথা হয়েছে গতকাল। তিনি ভালো নাকি খারাপ তৃষ্ণা বুঝতে পারে নি। তৃষ্ণা লিয়ার পেছন পেছন ঘুরছিল তখনই তিনি আসে চা চাইতে রান্নাঘরে। তখন তৃষ্ণা সেখানেই ছিল। সামনাসামনি পরে গেল তখন সে কথা বলেছিল।


বিকেল বেলা তৃষ্ণা নিজের রুমে বসে ছিল দুপুরে খাবার পর। সবাই ঘুম দিয়েছে। নিস্তব্ধ পরিবেশ তৃষ্ণার তো ঘুম আসছে না। তখনই দরজাটা হাট করে খুলে কেউ ভেতরে আসে।জায়ান রুমে ঢুকতেই তৃষ্ণা চিৎকার করে উঠে,," আপনি আবার এসেছেন আমার রুমে অসভ্যতামি করতে?"

জায়ান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তৃষ্ণা দিকে তাকিয়ে আছে। তৃষ্ণা আচমকা জায়ান এ দেখে আয়ান ভাবে।

তৃষ্ণা ভয়ার্ত গলায় আবার বলল," একদম আমার দিকে আসবেন না। আপনার হাত ভেঙ্গে দেবো।"

জায়ান শক্ত গলায় বলে,"কি বললে তুমি?"

এগিয়ে আসতে আসতে বলেন,,"আমার হাত ভেঙ্গে দেবে? ওইটুকু গায়ের জোর নিয়ে তুমি জায়ান আহনাফ এর হাত ভাঙ্গার হুমকি দাও? আসো দেখি ধরো হাত দিয়ে দিলাম। ভাঙ্গ দেখি।"

তৃষ্ণা জায়ান আহনাফ নামটা শুনতেই ঘোর থেকে বেরিয়ে এলো। জায়ান হাত বাড়িয়ে আছে।

তৃষ্ণা জিভে কামড় দিয়ে ফেলল চমকে।

জায়ান তৃষ্ণার হাত ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে বলল,"কি হলো হাত ভাঙবে না? এখন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছ কেন?"

"আমি আপনাকে বলি নাই। ওইসব ভুল করে বলে ফেলছি।"

" আমি ছাড়া আর কে আসবে তোমার কাছে? আমাকে‌ই বলেছ স্বামীকে হুমকি দেওয়া তাই না। শ্রদ্ধা ভক্তি তো করোই না এখন হুমকি দিচ্ছ?" দাঁতে দাঁত চেপে বলল জায়ান।




#চলবে....





( সকাল সকাল গল্প দিয়ে দিলাম। বৃষ্টি সকাল এমনিতেই সুন্দর। হাত এক কাপ চা নিয়ে গল্প পড়তে বসে যাও। প্রতিদিন গল্প দিচ্ছে না বলে অনেকে ই রাগ করছো তাদের বলছি সামনেই আমার ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা এজন্য লেখাপড়ায় খুব চাপ। এজন্য সপ্তাহে (সোম/বুধ/শুক্র) তিন দিন গল্প পাবেন।)

إرسال تعليق

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.