আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

ধ্রুবতারা-গল্প কন্যা পর্ব-২৪

Estimated read time: 4 min

ধ্রবতারা 
লেখিকাঃ গল্প কন্যা (ছদ্ম নাম)



জিসান ফোন করে সব কিছু ধ্রুবকে বলে।তুর কাজের সন্ধানে আছে কালকে চলে যাবে।আর কতটা সিরিয়াস সেটা ও বলে।

ধ্রুব বুঝতে পারছে কাজের জন্য সব সময় বাসায় থাকতে পারবে না।আর এ মেয়েকে আটকে ও রাখতে পারবে না।একটা স্টেপ নিতেই হবে।এ মেয়েকে আর সবাইকে চুপ রাখার জন্য ।

"দোস্ত তুই একটু হাবিব,জায়িন,পলাশ ওদের নিয়ে ইমিডিয়েটলি আমার সাথে দেখা কর।"

"কেন কি হয়েছে? "

"দেখা কর বলছি।"

ধ্রুবর রান্না করা মোরগ পোলাও যেভাবের টা সেভাবেই পড়ে আছে।দুপুরে আর কারো খাওয়া হয়নি।

তুর সারাদিন কেঁদে কেঁদে করে পার করেছে।নিজের ভাগ্যের নির্মমতা মেনে নিতে পারছে না।কি করবে,কি করা উচিত ভেবে দিশেহারা।জীবন যে কোন দিকে ওকে ধাবিত করছে... 

ধ্রুবর ব্যাকুল হওয়ার কারণ,খুব ভালো মতো বুঝতে পারছে।আগে যদি ও একশ থেকে দশ ভাগ এক হওয়ার  সম্ভাবনা ছিলো কিন্তু এখন তাও নেই।আগের কারণের চেয়ে এখনেরটা আরো স্ট্রং। যে করেই হোক কালকের মধ্যে চলে যেতে হবে।মনস্থির করে নেয়।

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা,
হঠাৎ কলিং বেল বেজে ওঠে।চোখ মুছে নিজেকে কিছুটা সাভাবিক করে।ভাবে হয়তো ধ্রুব এসেছে।দরজা খুলে দেয়।

দেখে কত গুলো নতুন মুখ। ঠিক নতুন না তিন চার বছর আগে এনাদের খুব আসা যাওয়া ছিলো রায়হান বাড়িতে।ধ্রুবর ফ্রেন্ড হাবিব,জায়িন,পলাশ ও জিসান।

সবাইকে দেখে ক্ষাণিকটা আনইজি ফিল করছে।কোনো মতে সবার উদ্দেশ্য সালাম দিয়ে ভেতরে চলে যায়।

সবাই লিভিং রুমে বসে।সকলে ধ্রুবর ফ্রেন্ড তবে সঙ্গে একজন হুজুর মতো লোক আছেন।

তুর ওনাদের হঠাৎ আগমনের ব্যাপারটা,সাভাবিক ভাবে নিতে পারছে না।আর হুজুর লোকটাকে দেখে কেমন যেন লাগছে।তবু চুপচাপ রুমে বসে থাকে।

প্রায় আধাঘণ্টা পরে জিসান দরজায় নক করে।তুর বের হয়।

"জি ভাইয়া।"
"চলো আমার সাথে..."

জিসানের সাথে ঘর ভর্তি মানুষের সামনে যেতে বলায়।এবার আরো বেশি আনইজি ফিল করছে।নিজেকে সংযত করে  জিসানের পিছু পিছু যায়।

লিভিং রুমের পরিস্থিতি সাভাবিক লাগছে না তুরের কাছে।কেমন যেন থমথমে।হুজুর গোছের লোকটা কিছু লেখালেখি শেষ করে একটা কাগজ বাড়িয়ে দেয় ধ্রুবর দিকে।

জিসান ধ্রুবর পাশের খালি জায়গা দেখিয়ে তুরকে  বসতে বলে।অবুঝ তুর মাথা নিচু করে আড় চোখে সবার দিকে তাকিয়ে ধ্রুবর থেকে কিছুটা দূরত্ব রেখে বসে।

ধ্রুব কাগজে সাইন করে তুর কে বলে "সাইন কর"

"কিসের কাগজ এটা? "

"রেজিস্ট্রপেপার।"

অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।"কি...?"

"হ্যা,তোর আর আমার। সাইন কর।"

"পাগল হয়ে গেছেন?"

"হ্যা,হয়েছি।তোর বারাবাড়িতে পাগল হয়েছি।"

"এটা কোনো দিনও সম্ভব না।"

বলে উঠে চলে যেতে নেয়।ধ্রুব খপ করে হাতে ধরে টেনে বসায়।

"এতো কথা শুনতে চাই না।সাইন কর।"

"দেখুন সবার সামনে সিনক্রিয়েট করতে চাচ্ছি না।ছাড়ুন...।আপনাকে আমি বিয়ে করবো না। "

"কেন? কেন বিয়ে করবি না?কোন দিক দিয়ে তোর অযোগ্য আমি।"

"জানেন না কেন?অভাব আছে নাকি কারণের।তিন বছর আগে কি করেছিলেন ভুলে গেছেন।"

"সে জন্য অনেক শাস্তি ভোগ করেছি।"

"এটা ছাড়াও কারণের অভাব নেই।আমি একটা রাস্তার মেয়ে।কোনো পরিচয় নেই আমার। কোনো দিক দিয়ে আমি আপনার যোগ্য নই।"

"এই পৃথিবীতে আমার যোগ্য হওয়ার অধিকার একমাত্র তোর আছে।এক মাত্র তুই ই আমার যোগ্য।অন্য কেউ এ জায়গা নিতে পারবে না।কোনো পরিচয় দেখার দরকার নেই আমার।তোর পরিচয় আমি।আর এটা ই যথেষ্ট।"

"আমি তো আপনাকে জিসান ভাইয়ার কথা বলেছিলাম।জিসান ভাইয়ার সাথে বিয়েতে কোনো আপত্তি নেই।"

 সবাই এতক্ষণ ওদের দিকে তাকিয়ে থাকলেও এখন  জিসানের দিকে তাকায়।জিসান চোখ বড়বড় করে ঢোক গিলে।ধ্রুব চোখ  মটকে তাকায়।
জিসান আমতাআমতা করে বলে উঠে, " দুঃখীত তুরিন,আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না।"

"আমি আর একটা কথা শুনতে চাই না।এটা তোর আমার সবার জন্য ভালো।"

"কিন্তু এতো ভালো আমার চাই না।পরবো না আমি  আপনাকে বিয়ে করতে।বাড়ির সবার মনে আর আঘাত দিতে চাই না।"

ফোন সামনে ধরে বলে"ইনি চাইলে ও পারবি না।"

ফোনে তাকিয়ে দেখে কবির সাহেব তুরের বাবা।তুর বাবাকে দেখে কেঁদে দেয়।কবির সাহেব বলেন "মা আমার কাঁদে না।তোমার চোখে পানি যে আমার সহ্য হয় না।অনেক দিনের ইচ্ছে আমার মেয়ে কে এমন সুযোগ্য একটা ছেলের হাতে তুলে দেবো।ধ্রুবর চেয়ে ভালো আর কউে হতে পারবে না মা।রাজি হয়ে যাও মা।আল্লাহ যা করেন সব ভালোর জন্য।আমার এ কথাটা রাখো মা।তোমাকে জন্ম দিইনি তাই বলে কি আমি তোমার বাবা না।অনুমতি প্রদানের সেই অধিকার কি নেই আমার? "

তুর হুহু করে কেঁদে উঠে।

"কাঁদে না মা।সাইন করো।আমি দেখি।আমার ছোট্ট মেয়েটা আজ কতো বড়ো হয়ে গেছে।আজকে তার বিয়ে দিয়ে দিচ্ছি।"

ধ্রুব কলম বাড়িয়ে দেয়। তুর বাবার দিকে তাকায়। উনি ঈশারায় নিতে বলে।

তুর কাঁদতে কাঁদতে হাতে কলম তুলে নেয়।আর কাঁপাকাঁপা হাতে রেজিস্ট্রিপেপারে সাইন করে দেয়।কাজি সাহেব বাকি ফর্মালিটি ও শেষ করেন।বিয়ে সম্পূর্ণ হয়।

কবির সাহেব বলেন,"বাবা আজকে থেকে তোমার পুতুল বউ সত্যি সত্যিই তোমার ।তারার দেশ থেকে এনে তোমার আকাশের তারা করে দিলাম।"
বলেই হেসে দেন।ধ্রুব ও হেসে দেয়।তুর ছাড়া সকলে হোহো করে হেসে উঠে।

"কখনো আমার মেয়েটাকে কষ্ট দিওনা বাবা।সুখ শান্তিতে আমার মেয়েটার জীবন রাঙিয়ে দিও।"

"ইনশাল্লাহ চাচা।আজকে থেকে ওর সব দুঃখ কষ্ট আমার।আমাকে স্পর্শ করে ওর কাছে যেতে হবে।আজকে থেকে ও আমার পরিচয়ে পরিচিত হবে সব জায়গায়,সবার কাছে।"

তুরের চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।কান্না যেন বন্ধ হওয়ার নাম নেই।এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না।কি হয়ে গেলো ওর সাথে।বিশ্বাস করতে পারছে না,সত্যি সত্যি ওর বিয়ে হয়ে গেছে।তাও আবার ধ্রুবর সাথে।

ধ্রুবর বন্ধুরা সবাই মিষ্টি মুখ করে।তুরকে খেতে বলে।কিন্তু তুর পাথরের মতো বসে আছে। আর ভাবছে।ওর জীবন টা কেমন যেন ছন্নছাড়া লাগছে।নিজের উপর নিজের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।কেমন যেন সব নিজে নিজে হয়ে যাচ্ছে।

ধ্রুব তো খুব খুশি।আসমানের চাঁদ হাতে পেয়েছে। খুশিতে দু তিনটে মিষ্টি খেয়ে ফেলেছে।খুশিতে অকারণেই হাসতে ইচ্ছে করছে।মুখ থেকে যেন হাসিটা সরছেই না।খুশিতে জিসানকে একে ওকে জড়িয়ে ধরছে।বন্ধুরা এমনকি জিসান ও খুশি ধ্রুবকে দেখে।ধ্রুবর প্রাপ্তি দেখে।পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস পাওয়ার মত অনুভূতি হচ্ছে ধ্রুবর।

বারবার তুরের দিকে তাকাচ্ছে।"অবশেষে... অবশেষে... এই ঘাড় ত্যাড়া মেয়েটা আমার বউ।"

আজকে মনে হচ্ছে এ ঘটনাটা জানাজানি হয়ে ভালোই হয়েছে।না হলে এতো তাড়াতাড়ি ওকে পাওয়া হতো না।ইচ্ছে করছে তুরের হাতে ধরে বলতে,"আমার হৃদয়ের রঙে রাঙিয়ে দিব তোকে।হৃদয়ের সব ভালোবাসা উজাড় করে তোর সব দুঃখ ভুলিয়ে দিব বউ...শুধু একটু ভালোবাসতে দে আমাকে...


চলবে....

Post a Comment

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.