ধ্রবতারা
লিখেছেনঃ গল্পকন্যা (ছদ্ম নাম)
তুর কান্নায় ভে'ঙে পড়ে।শেষ দিন গুলো কতো ক'ষ্ট বুকে নিয়ে ওর মা বেঁ'চে ছিলো।আর কতটা সা'হ'সী হলে এতো ক'ষ্ট নিয়ে,মৃ'ত্যু'র আগ পর্যন্ত চেষ্টা করে গেছে।ওর প্রতি কতো ভালবাসা ছিলো যার জন্য নিজের জী'বন দিয়ে ওর জী'বন দিয়েছে।একেই বুঝি মা বলে।মাকে যে একবার দেখতে ইচ্ছে করছে।আর বাবা সে কতটা ক'ষ্ট বুকে চে'পে রেখেছে।এতো ব্যর্থতা নিয়ে কিভাবে বেঁ'চে আছে।দেখবে না কেন।অবশ্যই দেখবে।অবশ্যই।
মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানায়।বাড়ির পরিবেশ থমথমে হয়ে যায়।
রিনা বেগম,রাইসা রিয়া,নানু, দাদি সবাই কেমন অ'প'রা'ধীর মতো দাঁড়িয়ে আছে।
এ কথা সব আত্মীয় স্বজনরা এক কান দু'কান করে জেনে গেছে।
ধ্রুবর কানে ও এসব কথা পৌঁছে।
এতো কিছুর ভিতরে ধ্রুবর দেয়া প্যাকেটটার ভিতর কি আছে।সেটা আর দেখা হয় না।
___________
বাড়িতে বিয়ের আমেজ যেন এখন থেকেই লেগে গেছে।মেহমানরা প্রায় অ'র্ধেক এসে পড়েছে।আর তিন দিন পর গায়ে হলুদ।তাই এখন থেকে সবাই সব যো'গা'ড় য'ন্ত করে ফেলছে।
সে দিনের সে ঘ'ট'নার পরে তুরকে আর কেউ কিছু বলার সা'হ'স পায় না।বাঁ'কা চোখেও তাকায় না।
এখন ওর আ'দ'রের শেষ নেই।
তুর ছাদে বসে আছে তন্নি,রিয়া,ঐশী, সমবয়সী আরো অনেকের সাথে।তখনই নিচ থেকে ডাক পড়ে।
নিচে গিয়ে দেখে একজন ভদ্রলোক ও একজন ভদ্রমহিলা।তুর ওনাদের সালাম দিয়ে বাবার কাছে যায়।
"বাবা ডেকেছো আমাকে। "
"হ্যাঁ মা ,এদিকে আসো।"
তুরকে ওনার পাশে বসায়।
"ইনি হচ্ছেন সেলিম চৌধুরী আর ওনি হচ্ছেন ওনার ওয়াইফ রেহেনা চৌধুরী।আর একটা পরিচয় হচ্ছে.... ,ইনি তোমার বাবা।"
তুর স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে সেলিম চৌধুরীর দিকে।
ইনি ই তাহলে সেই ব্যর্থ মানুষ।পাশের জনের দিকেও এক বার চোখ বুলায়।
তুরের চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।সেলিম চৌধুরী শব্দ করে বা'চ্চা'দের মতো কেঁদে দিয়েছে।কবির সাহেব তুরকে সেলিম চৌধুরীর পাশে বসান।
সেলিম চৌধুরী তুরের মাথায় মুখে হাত বুলিয়ে দেখেন।বোঝার চেষ্টা করছেন এটা তার আর জেনিফারের স'ন্তান ।
সে যেন তার পাশে তুরের জা'য়'গা'য় জেনিফারকে দেখতে পাচ্ছে।এটা তাদের স'ন্তান।তার বা'চ্চাটা।পুরো জেনিফারের মতো দেখতে।
এসব ভাবছে আর বা'চ্চাদের মতো কাঁদছে।তুরের হাত দুটো ধরে বলেছে,"আমাকে ক্ষ'মা করে দাও মা।তোমার সুন্দর জীবনটা কে আমি এলোমেলো করে দিয়েছি।তোমার মাকে ক'ষ্ট দিয়েছি।অনেক ভু'ল অনেক অ'ন্যা'য় করেছি তোমাদের সাথে।তার শা'স্তি পাচ্ছি মা।তার শা'স্তি ই আমি পাচ্ছি...।তুমি যদি ক্ষ'মা না কর তাহলে যে উপরওয়ালা ও আমাকে ক্ষ'মা করবে না।তোমার মায়ের কাছে তো সেই সুযো'গ টুকু ও পাইনি।তোমার কাছেই ভি'ক্ষা চাইছি।দয়া করো মা...।"
সেলিম চৌধুরীর কান্না দেখে তুর আরো বেশি কাঁদতে থাকে।ওনার হাতে ধরে বলছে,"কাঁদবেন না আপনি।আপনার তো কোনো দো'ষ নেই।সব কিছু ভা'গ্যের লিখন।আর পরি'স্থি'তির স্বী'কার।হয়তো আমার মা এমন ভা'গ্য নিয়ে পৃথিবীতে এসেছেন।তাই এভাবে চলে যেতে হয়েছে।কোনো কিছু আপনার হাতে ছিলো না।আপনার প্রতি আমার কোনো অ'ভি'যো'গ নেই।আর যদি কোনো ভু'ল করে থাকেন,তার জন্য আমি আল্লাহর কাছে আপনার জন্য দোয়া করবো।তিনি পরম দয়ালু তিনি আপনাকে ক্ষ'মা করে দিবেন।বাবা মায়ের জন্য স'ন্তান দোয়া করলে ও আল্লাহ সেই বাবা মাকে ক্ষ'মা করে দেন।আর আমার জী'বন এলোমেলো হয়নি,আমার এই বাবা -মা তাদের সবটা দিয়ে আগ'লে রেখেছেন।আমি কোনো কিছু থেকে ব'ঞ্চিত হইনি। আমার মা- বাবা,এই পরিবার তাদের আ'দ'র ভালোবাসা কোনো কিছুতেই কোনো কমতি রাখেনি।না চাইতেই আল্লাহ আমাকে অনেক কিছু দিয়েছেন।আল্লাহর কাছে হা'জা'র শুক্রিয়া।আপনি নিজেকে দো'ষী ভাববেন না।এসব নিয়ে আর ক'ষ্ট পাবেন না।আল্লাহ যাকে বেশি পছন্দ করেন তাকে অ'সু'স্থতা দান করেন।তিনি আপনাকে প'রী'ক্ষা করছেন।এটাকে শা'স্তি ভাববেন না।আপনি আমার জন্য দোয়া করবেন।আমি যেন আপনাদের সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে পারি।আমার মৃ'ত মায়ের জন্যও দোয়া করবেন।"
সেলিম ,কবির,জহির,সমির সাহেব লিভিং রুমের উপস্থিত সকলে তুরের কথা শুনে অবা'ক।এতটুকু একটা মেয়ে কি সুন্দর বুঝ'দা'রের মতো কথা গুলো বলেছে।সবাই খুব খুশি হয়েছে।
সেলিম সাহেব মেয়েকে বুকে জ'ড়িয়ে নেয়।তৃ'প্তির হাসি হাসে।হাসতে হাসতে কেঁদে ফেলে।"তাহলে আমাকে বাবা বলে ডাক মা।তোর মুখে একবার বাবা ডাক শুনে ক'লি'জা ঠান্ডা হোক।বল মা। "
"বাবা.... আপনি আমার আরেক বাবা।এখন থেকে আমি আমার কোনো বাবা-মাকে কাঁদতে দিব না।কখনো আমি চলে যাবো আপনাদের কাছে ,আপনাদেরকে দেখতে।মাঝে মধ্যে (রেহেনা বেগম)আমার এই মাকে নিয়ে আপনি চলে আসবেন আমার কাছে।আসবেন না বাবা নতুন মাকে নিয়ে? "
সেলিম সাহেব সাথে রেহেনা বেগম ও কেঁদে দেয়।রেহেনা বেগম ও আ'দরের সাথে তুরকে বুকে টে'নে নেয়।সকলেই মুগ্ধ তুরের প্রতি।আজ যেন বাঁ'কা চোখে তাকানো মানুষ গুলো ভেতরে ভেতরে অ'নু'ত'প্ত।
তুরের বিয়েতে তার এই বাবা মা ও থাকছে।বিয়ের আনন্দটা এবার যেন দিগুণ হয়ে গেছে।সকলের মুখে তৃ'প্তির হাসি।কিছু দিনের সব বে'দ'না'দা'য়ক মু'হূর্ত গুলো একেবারে সুখ হয়ে ফিরে এসেছে।
এদিকে ফাহিম আর রিয়া চু'টিয়ে প্রেম করছে।ছাদে এখানে ওখানে সু'যোগ পেলেই একাকি সময় কা'টা'চ্ছে।
তুরের সব ফ্রেন্ডরা বিকেলের দিকে এসে পড়েছে।সবাই খুব মা'স্তি করছে।বাড়ি ভর্তি মেহমান।
এদিকে ধ্রুব এখনো আসতে পারেনি।মেহেন্দির দিন একেবারে আসবে।এর পর এক মাসের ছুটি ।
সবার মাঝে থেকে ও ধ্রুবর কথা তুরের খুব মনে পড়ছে, দেখতে ইচ্ছে করছে।কদিন ধরে লা'গা'তা'র ফোন করছে কিন্তু একবারও ধরতে পারছে না।যখন ফোন করে তখন কিভাবে যেন তুর ফোনের কাছে থাকে না।পরে ব্যাক করতে খুব ল'জ্জা করে।সে রাতের কথা মনে হয়ে কেমন যেন শ'রী'র অব'স অব'স হয়ে যায়।তাই আর ফোন ব্যাক করতে পারে না।
এদিকে ধ্রুব ভাবে,তুর কি সে রাতের জন্য আবার ভু'ল বুঝেছে।আমাকে কি কখনো ক্ষ'মা করবে না।প্যাকেট টা দেখে ও একটা ফোন করলো না।এতো বার ফোন করার পরে ধরলো ও না।
টা'না তিন দিন ধরে পাচ্ছে না। মনটা খুব খা'রা'প হয়ে যায়।তাই ঠিক করে আর নিজে থেকে ফোন করবে না ।আবার ভাবে আর কয়েকটা দিন পরে ই তো এক সাথে হবে,তখন সব পু'ষি'য়ে নিবে।আর কোনো ছাড়া ছাড়ি নেই।
পুরোনো স্মৃ'তি মনে করে ,আর নতুন স্বপ্ন দেখে যাচ্ছে ধ্রুব।কতো শত প্ল্যা'ন করছে,কতো জায়গায় ঘুরতে যাবে।"বিয়ের দু'দিন পর ই হা'নি'মু'নে চলে যাব দূরে কোথাও।এ মেয়ের যে 'ল'জ্জা,দেখা গেছে কাছে গেলাম আ'দর করতে তখন আমাকে রেখে চলে যাবে।না না বাবা এতো ঝুঁ'কি নিয়ে হৃ'দ'য়ের অ'সুখ আর বাড়াতে চাই না।"এসব ভেবে তুরে ছ'বির দিকে তাকিয়ে একা একা ই হাসে। প্রেয়সীর ব্য'ব'হৃ'ত বালিশ বুকে জ'ড়িয়ে মন ভু'লায়।
চলবে.....