আমাজনের গহীনে
পর্ব-০৫
লেখকঃ রকিব হাসান
কিঁচ।
রবিন পকেটে আলতো হাত বুলিয়ে আদর করল জেরিকে।
ভয় পাস না, জেরি। পিঁপড়েরা নদীতে হামলা করতে পারবে না। আমরা নিরাপদ।
পিঁপড়েদের ভয় নেই ঠিক, কিন্তু ক্যানুটা যাচ্ছে কোথায়? প্রশ্ন করুল কিশোর।
তিন বন্ধু নদীর দিকে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। পানির উপরে ছড়িয়ে রয়েছে ডাল-পালা। তা থেকে ঝুলছে লতা আর শ্যাওলা।
দেখে নিই বইতে কী বলে, বলল কিশোর। ব্যাকপ্যাক থেকে রেইন ফরেস্টের বইটা বের করল ও। দ্রুত পাতা উল্টে চলল।
শীঘি এক নদীর ছবি খুঁজে পেল। পড়ল:
আমাজান নদী ৪০০০ মাইলের বেশি
লম্বা। পেরুর পর্বতশ্রেণী থেকে শুরু
করে, ব্রাজিল পেরিয়ে, আটলান্টিক
মহাসাগরে পড়েছে। নদীর অববাহিকা
পৃথিবীর রেইন ফরেস্টের অর্ধেকের
বেশি ধারণ করে।
বন্ধুদের দিকে চাইল কিশোর।
আমরা আমাজান নদীতে, বলল। এটা চার হাজার মাইলের বেশি লম্বা।
দুনিয়ার সবচাইতে বড় নদী, বলল মুসা।
রবিন নদীর দিকে চাইল। হাত রাখল পানিতে।
আমি কিছু নোট নেব, বলল কিশোর। প্যাক থেকে নোটবই বের করে লিখল:
আমাজান রেইন ফরেস্ট হচ্ছে…
কিশোর, দেখো! সভয়ে বলে উঠল রবিন। পিরানহা!
কিছু নীল রঙের মাছ নৌকার কাছে সাঁতরাচ্ছে। লাল পেট আর তীক্ষ্ণধার দাঁত ওদের।
সাবধান! সতর্ক করল কিশোর। একবার বাগে পেলে আর রক্ষে নেই।
আমাদের তীরে ফেরা উচিত, বলল মুসা।
কিশোর বইটা ব্যাকপ্যাকে রেখে দিল।
কীভাবে? বলল রবিন। পানিতে নামা যাবে না। আর আমাদের কাছে বৈঠাও নেই।
কিশোর মাথা ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করল। একটা প্ল্যান দরকার, বলল।
নদীর দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল ও। ক্যানুটা শীঘ্রি কিছু লতার নীচ দিয়ে যাবে।
আমি একটা লতা চেপে ধরব, বলল কিশোর। তারপর নিজেদেরকে টেনে তীরে নিয়ে যাব।
ঠিক আছে, সায় জানাল রবিন।
ডালগুলোর নীচ দিয়ে ভেসে যাচ্ছে, সটান উঠে দাঁড়াল কিশোর।
দুলে উঠল ক্যানু। আরেকটু হলেই পড়ে যাচ্ছিল ও।
ক্যানুটার ব্যালেন্স ঠিক রাখো, বলল কিশোর।
মুসা একপাশে হেলে পড়ল। রবিন আরেক পাশে। কিশোর হাত বাড়াল-কিন্তু ধরতে ব্যর্থ হলো!
ক্যানুটা কয়েকটা ডালের নীচ দিয়ে ভেসে যাচ্ছে।
কিশোর আরেকটা মোটা লতার উদ্দেশে হাত বাড়াল।
এবার ধরতে পারল!
লতাটা ঠাণ্ডা আর আঁশযুক্ত। সহসা কিলবিল করে উঠে ঝাঁকি দিল ওটা!
আহহহ! কিশোর আর্তচিৎকার ছেড়ে ক্যানুতে পড়ে গেল।
লতাটা জীবন্ত।
ওটা একটা লম্বা, সবুজ সাপ!
গাছ থেকে খসে পড়ল সাপটা। ছলাৎ করে পানিতে পড়ে সাঁতরে চলে গেল।
খাইছে! বলে উঠল মুসা।
আরেকটু হলেই গেছিলাম, বলল কিশোর।
তিন বন্ধু পরস্পর দৃষ্টি বিনিময় করল।
এখন কী? রবিন জানতে চাইল।
দেখি… নদীর দিকে চাইল কিশোর। সামনে কোন লতা নেই। তবে প্রকাণ্ড এক গুঁড়ি ভাসছে পানিতে।
ওই ডালটা ধরো, বলল কিশোর। ওটাকে বৈঠা হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
ডালটার কাছে ভেসে এল ক্যানু। রবিন হাত বাড়াল।
হঠাৎই ডালটা শূন্যে মাথা তুলল।
কুমির!
বাঁচাও! আর্তচিৎকার ছেড়ে ক্যানুতে চিতিয়ে পড়ে গেল রবিন।
কুমিরটা বিশাল হাঁ করল। এবার ক্যানুর পাশ দিয়ে সাঁতরে চলে গেল।
বাপ রে, ফিসফিস করে বলল কিশোর।
এসময় তীক্ষ্ণ এক শব্দ বাতাস চিরে দিল।
তিন বন্ধু আঁতকে উঠল।
খাইছে, চেঁচাল মুসা।
আবারও ভয়ঙ্কর কোন জানোয়ার দেখবে ভেবেছে।
কিন্তু তার বদলে দেখতে পেল ছোট্ট বাদামী এক বানর। গাছে লেজ বেঁধে ঝুলছে।
চলবে.....